কাঁঠালের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। কাঁঠাল গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। কাঁঠাল অনেকেরই খুব পছন্দের ফল। আবার অনেকে এটি পছন্দ করেন না। কাঁঠালের কোন কিছুই ফেলনা নয়। কাঁঠাল সবাই না পছন্দ করলেও কাঁঠালের বিচি সবারই প্রায় পছন্দের।
কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে অনেক উপকারিতা আবার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। কাঁঠালের বিচি নানাভাবে খাওয়া যায়। আজকের এই আর্টিকেলে কাঁঠালের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কাঁঠালের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
- কাঁঠালের বিচির উপকারিতা
- কাঁঠালের বিচির অপকারিতা
- কাঁঠালের বিচি কিভাবে ওজন বাড়ায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
- কাঁঠালের বিচি খেলে কি অ্যালার্জি বেড়ে যায়?
- কাঁঠালের বীজের পুষ্টিগুণ
- কাঁঠালের বিচির ঔষধি গুন
- কাঁঠালের বিচি খাওয়ার নিয়ম
- কাঁঠালের বিচি সংরক্ষণ করার উপায়
- গর্ভাবস্থায় কাঁঠালের বিচি খাওয়া যাবে কি না
- লেখকের শেষ কথাঃ কাঁঠালের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনার এ পর্যায়ে কাঁঠালের বিচির
উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। সুমিষ্ট ও তীব্র গন্ধযুক্ত কাঁঠাল খেতে যেমন মিষ্টি ও
সুস্বাদু তেমনি কাঁঠালের বিচিও স্বাদ ও উপকারিতার দিক দিয়ে কোন অংশে কম নয়।
চলুন তাহলে এখন পুষ্টিগুণে ভরপুর কাঁঠালের বিচির উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া
যাক।
হজম শক্তি বাড়াতে কাঁঠালের বিচির উপকারিতাঃ হজম শক্তি বাড়াতে
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা অনেক। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার বা আস। ফলে
কাঁঠালের বিচি খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে নিয়মিত
সঠিকভাবে কাঁঠালের বিচি খেলে তা দূর হয়ে যায়। পেট ফাঁপা, বদহজম ও গ্যাস্ট্রিক
জনিত সমস্যা দূর হয়ে যায়। ফলে টয়লেট ক্লিয়ার হয়ে পেট পরিষ্কার হয়ে যায়।
রক্তস্বল্পতা পূরণ করেঃ রক্তস্বল্পতা পূরণে কাঁঠালের বিচি খুবই কার্যকরী
ভূমিকা পালন করে। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা রক্তস্বল্পতা
পূরণে সাহায্য করে। কাঁঠালের বিচি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি
পায়। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কাঁঠালের বিচি রাখলে রক্তস্বল্পতা পূরণ হয় ও
অ্যানিমিয়া রোগের ঝুঁকি কমে।
হার্ট ভালো রাখে ও স্ট্রোকের ঝুঁকে কমায়ঃ কাঁঠালের বিচিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা ব্লাড প্রেসার কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কাঁঠালের বিচি সঠিক পরিমাণে খেলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন
বি কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান। যা শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া
কোলেস্টরেলবিহীন কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন যা শরীরের পেশী গঠনে
বেশ ভূমিকা পালন করে।
চুল ও চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে ভিটামিন এ।
নিয়মিত সঠিক পরিমাণে কাঁঠালের বিচি খেলে ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ হয়। যার ফলে
রাতকানা রোগের মুক্তি মিলবে। এছাড়াও চুলের আগা ফাটা দূর করতে কাঁঠালের বিচি
সাহায্য করবে।
ত্বকের বলিরেখা দূর করে ও ত্বকের রোগ সারেঃ নিয়মিত কাঁঠালের বিচি খেলে
ত্বকের বলিরেখা দূর হয় এবং ত্বকের নানা রোগ থেকে মুক্তি মেলে। কাঁঠালের বীজ দুধ
ও মধুর সঙ্গে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগালে ত্বকের দাগ দূর হয় ও ত্বক সুন্দর হয়ে
ওঠে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ নিয়মিত কাঁঠালের বিচি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কাঁঠাল সাধারণত বর্ষাকালে বেশি পাওয়া যায়। এ সময় বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বাড়ে। তাই আপনি যদি কাঁঠালের বীজ সঠিকভাবে খান তাহলে বর্ষাকালের বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
নিরামিষ ভোগীর জন্য উপকারঃ যারা নিরামিষ ভোগী মাছ মাংস কিছুই খান না।
তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে কাঁঠালের বিচি হতে পারে অন্যতম খাবার।
তাছাড়া এটি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। নিরামিষভীরা চাইলে কাঁঠালের বিচি
বিভিন্নভাবে রান্না করে খেতে পারবেন।
কাঁঠালের বিচির অপকারিতা
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনায় এতক্ষণ পর্যন্ত কাঁঠালের বিচির উপকারিতা জানতে পারলেন। এখন আলোচনা করব কাঁঠালের বিচির অপকারিতা নিয়ে। কাঁঠালের বিচির যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। কাঁঠালের বিচি নিয়ম মেনে খেলে এর উপকারিতা পাবেন।
আর যদি কাঁঠালের বিচি অধিক পরিমাণে খাওয়া হয় তাহলে এর উপকারিতার পরিবর্তে
অপকারিতাকাটাই বেশি হবে। কাঁঠালের বিচি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি।
কাঁঠালের বিচি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অনেকের ক্ষেত্রে এসব উপাদান বিরুপ প্রভাব
ফেলে। অতিরিক্ত কাঁঠাল কাঁঠালের বিচি খাওয়ার ফলে যেসব সমস্যা হতে পারে।
- পেট ফাঁপা
- ডায়রিয়া
- বদহজম
- বদহজমের ফলে ক্ষুধা মন্দ হতে পারে।
- এলার্জি বাড়তে পারে
কাঁঠালের বিচি কিভাবে ওজন বাড়ায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনায় এখন জানব কাঁঠালের বিচি কিভাবে ওজন বাড়াতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আপনি কি ওজন বাড়াতে চাচ্ছেন? বা ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাচ্ছেন? তাহলে কাঁঠালের বিচি কিভাবে ওজন বাড়াতে বা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে তা নিয়ে এখন আলোচনা করব। সঠিক পরিমাণে কাঁঠালের বিচি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর বেশি পরিমাণে কাঁঠালের বিচি খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেট। ফলে কাঁঠালের বিচি পরিমাণে বেশি খেলে ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ আরো বেড়ে যায় ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
- কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর প্রোটিন থাকে। কাঁঠালের বিচি নিয়মিত খেলে পেট ভরা থাকে যা অন্য খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- কাঁঠালের বিচিতে প্রোটিন বেশি থাকলেও ফ্যাট অনেক কম থাকে। ফলে সঠিক পরিমাণে কাঁঠালের বিচি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কাঁঠালের বিচি খেলে কি অ্যালার্জি বেড়ে যায়?
কাঁঠালের বীজের পুষ্টিগুণ
- ক্যালোরি এর পরিমাণ ৫৩
- কার্বোহাইড্রেট থাকে ১১ গ্রাম
- প্রোটিনের পরিমাণ ২ গ্রাম
- ফ্যাট এর পরিমাণ প্রায় শূন্য
- ফাইবার থাকে ০.৫ গ্রাম
- ভিটামিন বি২ থাকে দৈনিক চাহিদার ৮%
- ভিটামিন বি ১ থাকে দৈনিক চাহিদার ৭%
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url