২০২৬ সালে শবে বরাত কবে-শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল
শবে বরাতের রাত মুসলমানদের অনেক জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ রাত। ২০২৬ সালে শবে বরাত কবে শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল কি কি এই বিষয়গুলো যদি জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেল আপনার জন্য।
আজকের আর্টিকেলে ২০২৬ সালের শবে বরাত কবে শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলো কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। এই তথ্যগুলো জানা থাকলে আপনার ধর্মীয় জীবন সাজাতে আরো সহজ হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ২০২৬ সালে শবে বরাত কবে- শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল
- শবেবরাত কি?
- ২০২৬ সালের শবে বরাত কবে
- শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল
- শবে বরাতের রাতে নামাজ পড়া
- শবে বরাতের রাতে কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির আজগার করা
- পরের দিন রোজা রাখা
- নির্জনে ইবাদত করা
- শবে বরাতে যেসব কাজ করা যাবে না
- FAQ: প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
- শেষ কথাঃ ২০২৬ সালের শবে বরাত কবে- শবেবরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল
শবেবরাত কি?
২০২৬ সালের শবে বরাত কবে-শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলো সম্পর্কে জানার
আগে শবে বরাতটা আসলে কি? তা জানতে হবে। শবে বরাত শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে
এসেছে।শব অর্থ রজনী বা রাত আর বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি। তাই একত্রে এর
অর্থ দাঁড়ায় ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত। কিছু হাদিসে বর্ণিত আছে শবে বরাতের রাত
ভাগ্য অনুলিপির রাত অর্থাৎ এ রাত্রে বান্দার ভাগ্য অনুলিপি করা হয়। শবে
বরাতের রাত্রি আসে আরবি শাবান মাসে।
২০২৬ সালের শবে বরাত কবে
.২০২৬ সালের শবে বরাত কবে তা যদি আপনি জানতে চান তাহলে আপনার জন্য আজকের আমার এই আর্টিকেল। শবে বরাত ঈদ উল ফিতর ঈদুল আযহা এগুলো নির্ভর করে মূলত চাঁদ দেখার উপর। আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে মূলত শবে বরাতের রাত হিসেবে ধরা হয়। এ রাত টি মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ রাতে মুসলমানরা নফল ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। তাই পবিত্র শবে বরাতের রাতটি কবে তা অনেকেই জানতে চান। ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখ দিবাগত রাত কে শবে বরাতের রাত্রি হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে এটা সম্পূর্ণ চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল।
চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে একদিন আগে অথবা একদিন পরেও শবে বরাতের রাত অনুষ্ঠিত
হতে পারে। শবে বরাতের সরকারি ছুটি মূলত শবে বরাতের পরের দিন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
এই হিসেবে শবে বরাত যদ.৪ তারিখ দিবাগত রাতে হয়ে থাকে তাহলে পরের দিন ৫ তারিখে
সরকারি ছুটি অনুষ্ঠিত হবে।
শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল
শবে বরাতের রাত টি মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাত। শবে বরাতকে কেন্দ্র করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে যেগুলো মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা ও ক্ষমা পাওয়া সম্ভব। শবে বরাত কে লাইলাতুল বারাআত বলা হয়। শবে বরাতের রাতকে বরকতময় রাত, পাপ মুক্তির রাত, ক্ষমাপ্রাপ্তির রাত প্রভৃতি নামে ভূষিত করা হয়েছে।
তাছাড়া শবে বরাতের মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসের বার্তা নিয়ে আসে। শবে বরাতের ১৫
দিন পর রমজান মাস শুরু হয়। তাই শবে বরাতের মাধ্যমে মুসলমানেরা রমজানের প্রস্তুতি
নিতে শুরু করে। তাহলে কথা না বাড়িয়ে শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলো সম্পর্কে
আলোচনা করা যাক।
শবে বরাতের রাতে নামাজ পড়া
শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলোর মধ্যে শবে বরাতের রাতে নফল নামাজ পড়া উত্তম। শবে বরাতের রাতে বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়তে হয়। কেননা এ রাত্রে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে তার ইবাদতের মাধ্যমে ক্ষমা করে দেন। তাই এ রাত্রে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। তবে এই নফল নামাজের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। যার যেমন ইচ্ছা যত ইচ্ছা নফল সালাত আদায় করতে পারবে।
শবে বরাতের নামাজে ক্ষেত্রে অনেকে নির্দিষ্ট কিছু সূরা দিয়ে নামাজপড়ার কথা বলে থাকে। কিন্তু এটার কোন ভিত্তি নেই যেকোনো সূরা দিয়ে শবে বরাতের রাতে নফল নামাজ আদায় করা যাবে। শবে বরাতের রাত্রে রাসুল (সাঃ) নফল নামাজে দীর্ঘ রুকু ও সেজদা দিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন একবার হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) শবে বরাতের রাত্রে নামাজে দাঁড়ান এবং তিনি সেজদায় গিয়ে এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে আমার আশঙ্কা হয়েছিল তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
তাই আমি ওনার বৃদ্ধাঙ্গুলে নাড়া দেই। তখন ওনার বৃদ্ধাঙ্গুল নড়ে ওঠে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নামাজ শেষ করলেন এবং আমাকে লক্ষ্য করে বললেন হে আয়েশা তোমার কি আশঙ্কা হয়েছে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? তখন আমি বললাম হে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) আমার আশঙ্কা হয়েছিল যে আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন তুমি কি জানো আজকে রাতটা কিসের রাত? আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন।
আরও পড়ুনঃ ২০২৬ সালের রমজান কত তারিখ- ইফতার ও সেহরীর সময়সূচি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আজকের রাত অর্থ শাবানের রাত। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাত্রে বান্দাদের প্রতি নজর দিয়ে থাকেন এ রাত্রে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা প্রার্থীদের ক্ষমা করে দেন অনুগ্রহ প্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের নিজ অবস্থাতেই।(শুয়াবুল ঈমান, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৩৮২)
অর্থাৎ এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে এ রাত্রে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া উত্তম। এ
নফল নামাজগুলোতে রুকু সেজদা হবে দীর্ঘ।
শবে বরাতের রাতে কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির আজগার করা
শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলোর মধ্য শবে বরাতের রাত্রে নফল নামাজের পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির আজগার করা উত্তম। শবে বরাতের রাত্রে কোরআন তেলাওয়াত ও জিকিরের মাধ্যমে বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয় এতে আল্লাহ খুশি হয়ে বান্দাদের ক্ষমা করে দেন।
হযরত আয়েশা (রা) বলেছেন রাসূল (সা) এ রাত্রে মদিনার কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন। তিনি আরো বলেন রসূল সাঃ বলেছেন এ রাত্রে বনি কালবের ভেড়া বকরির(সংখ্যার পরিমাণের ) পশমের চেয়েও বেশি পরিমাণ গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।(তিরমিজিঃ ৭৩৯)
পরের দিন রোজা রাখা
শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলোর মধ্যেও শবে বরাতের রোজা রাখাও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। শবে বরাতের রাত্রে নফল ইবাদত বন্দুকের পাশাপাশি দিনের বেলা রোজা রাখাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং উত্তম। হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো ।
কেননা সন্ধ্যার পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দাদের
উদ্দেশ্যে বলেন হে আমার বান্দা তোমাদের মধ্যে কে আছো ক্ষমা প্রার্থী আমি তাকে
ক্ষমা করে দেবো, কে আছো রিজিক প্রার্থী আমি তাকে রিযিক দিব,কে আছো বিপদগ্রস্ত আমি
তাকে বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের বিভিন্ন
প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে আহবান করতে থাকেন।
নির্জনে ইবাদত করা
শবে বরাতের ইবাদত বন্দেগী নির্জনে একাকী করায় উত্তম। শবে বরাতের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে দলে দলেমানুষ সমবেত হয়ে নামাজ আদায় করার কোন নির্দিষ্ট হাদিসের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোন ঘোষণা ছাড়া যদি মসজিদে কেউ এসে যায় তাহলে যে যার মত নিজে নিজে ইবাদতে মজবুত থাকবে কেউ কারো ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না ।
শবে বরাতের রাত্রে নির্জনে নফল নামাজের পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আজগর
দোয়া ও বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা ভালো। এছাড়াও কবর জিয়ারত করা উত্তম। রাসূল সাঃ
এই রাত্রে কবর জিয়ারত করে কবরবাসীদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে ইতালি যেতে কত টাকা লাগে
শবে বরাতে যেসব কাজ করা যাবে না
শবে বরাতের আমাদের সমাজে কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত রীতি রয়েছে যেগুলোর জন্য হাদিসে
কোন প্রমাণ নেই। শবে বরাতের যে সব কাজ করা যাবে না তা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- শবে বরাতে রুটি হালুয়া বিতরণ করা ঠিক না
- আতশবাজি দিয়ে আনন্দ উল্লাস করা যাবে না
- শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদে আলোকসজ্জা করা যাবে না
- শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোন ইবাদত নেই বা কোন নির্দিষ্ট নিয়মে সালাত আদায় করার নিয়ম নেই তাই শবে বরাত উপলক্ষে নির্দিষ্ট কোন সূরা দিয়ে বাবা কোন নির্দিষ্ট নিয়মে নামাজ পড়া যাবে না।
- অন্যর ইবাদত বন্দেগীতে বাধা প্রদান করা যাবে না।
- শবে বরাতের রাত্রে সারারাত জেগে নফল নামাজ আদায় করে ফজরের নামাজ যাতে কাজা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
FAQ: প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
প্রশ্নঃ ২০২৬ সালের শবে বরাত কবে?
উত্তরঃ ২০২৬ সালের শবে বরাত ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখ (চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল)।
প্রশ্নঃ শবে বরাত কি?
উত্তরঃ শব অর্থ রাত আর বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি অর্থাৎ শবে বরাত বলতে
বোঝায় ভাগ্যরাত বা মুক্তির রাত।
প্রশ্নঃ শবে বরাতের রাত্রে কত রাকাত নামাজ পড়তে হয়?
উত্তরঃ শবেবরাতের রাত্রে নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা নেই। যে যত সংখ্যা
খুশি দুই রাকাত দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করতে পারে।
প্রশ্নঃ শবে বরাতের কি কোন নির্দিষ্ট দোয়া আছে?
উত্তরঃ না, শবে বরাতের জন্য কোন নির্দিষ্ট দোয়া নেই।
প্রশ্নঃ শবে বরাতে কি রুটি হালুয়া বিতরণ করা জরুরী?
উত্তরঃ না, শবে বরাতে রুটি হালুয়া বিতরণ করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এর কোন
প্রমাণ হাদিসে নেই। তবে দান বা অতিথি আপ্যায়নে করলে সমস্যা নেই।
শেষ কথাঃ ২০২৬ সালের শবে বরাত কবে- শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল
২০২৬ সালের শবে বরাত কবে শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকালে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনারা ২০২৬ সালের শবে বরাত কবে সেটাই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন এবং শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
আসুন আমরা সবাই শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে জেনে বেশি বেশি এ রাত্রে ইবাদত বন্দেগী করি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করি এবং তওবা করি। কেননা আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন এ রাত্রে তার অফুরন্ত দয়ার ভান্ডার খুলে দেওয়া হবে।
এ রাত্রে তিনি পৃথিবীর আসমানে নেমে আসবেন এবং বান্দাকে ডেকে ডেকে তার প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে আহবান করতে থাকবেন। কথা না বাড়িয়ে আজকের আলোচনা এখানে শেষ করছি। আজকের এই আর্টিকেলে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা করবেন। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url