এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার
এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। এলার্জি এমন একটি সমস্যা যা সম্পর্কে কমবেশি আমরা অনেকেই পরিচিত। এলার্জির কারণে অনেকেই অস্বস্তিকর অবস্থায় ভোগেন। এলার্জি শুধু চুলকানি নয় এর কারণে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমনঃ হাঁচি-কাশি,শ্বাসকষ্ট,চোখ চুলকানো ইত্যাদি।
এলার্জির সমস্যা সমাধানে অনেকে অনেক ওষুধ সেবন করেও কোন সমাধান মিলেনা উল্টো আরো সমস্যা সৃষ্টি হয়।কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে যা দিয়ে অ্যালার্জি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এর মধ্যে নিম পাতা হচ্ছে অন্যতম প্রাকৃতিক উপাদান। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার
- এলার্জি কি? এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার
- নিম পাতা কি? কেন উপকারী?
- এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার
- ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার
- চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার
- রোগ প্রতিরোধে নিম পাতার ব্যবহার
- হজমে ও পেটের সমস্যায় নিম পাতার ব্যবহার
- নিম পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
- নিমপাতা ওজন কমাতে সাহায্য করে
- সংক্রমণ ও ক্ষত নিরাময়ে নিমপাতা
- নিম পাতার আরও ব্যবহার ও উপকারিতা
- নিম পাতার অপকারিতা
- নিম পাতা খাওয়া ও ব্যবহারের নিয়ম
- লেখক এর শেষ কথা
এলার্জি কি? এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার
এলার্জি বলতে সাধারণত এমন কিছু উপসর্গকে বোঝায় যেগুলো বিভিন্ন খাবার যেমন গরুর গোশত, হাঁসের গোশত,হাঁসের ডিম, দুধ ইত্যাদি খেলে আবার ধুলা মাটির সংস্পর্শে ও পারফিউমের কারণেও প্রকাশ পেয়ে থাকে। এটা শরীরে ফুসকুড়ি আকারে দেখা দিতে পারে আবার গোলাকার লাল লাল চাকা হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুলে যেতে পারে। এছাড়াও এলার্জি প্রভাবে চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখ চুলকায়, হাঁচি কাশি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি দেখা দেয়।
এসব সমস্যার সমাধানে অনেকেই অনেক রকম ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু তেমন কোন সমাধান
মিলেনা। আপনি চাইলে প্রাকৃতিক কিছু উপাদান দিয়ে এলার্জি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে
পারেন। প্রাকৃতিক উপাদান গুলোর মধ্যে নিমপাতা অন্যতম সমাধান হতে পারে। নিমপাতার
উপকারী কিছু গুণাবলী কারণে এলার্জি খুব সহজে দূর হতে পারে।
নিম পাতা কি? কেন উপকারী?
নিম গাছের পাতায় মূলত নিম পাতা। নিম গাছের পাতা, ছাল, কাণ্ড, ফুল, ফল সবকিছুই খুব মূল্যবান এবং ঔষধি গুণাবলীতে পরিপূর্ণ থাকে। তবে নিম পাতার উপকারিতা টা বেশি দেখা যায়। এটি প্রাচীন কাল থেকে ভেষজ চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম পাতাতে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও এন্টি প্লেমেটরি গুনাবলি যা বিভিন্ন রোগ-নিরাময়ে সহায়ক।
যুগ যুগ ধরে ত্বকের যত্নে,চুলের যত্নে ও বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে, এলার্জি, চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম গাছ ও নিমপাতার যে কতটা উপকারী তা বলে শেষ করা যাবে না। নিম গাছের ছায়া অনেক শীতল হয়। নিম গাছের ডাল দিয়ে এসব করলে দাঁতের অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়।
এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার
আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে অ্যালার্জি সমস্যায় ভোগেন তাহলে আপনি নিম পাতার ব্যবহার করে দেখতে পারেন । এতে আপনার সমস্যা দ্রুত সমাধান হতে পারে। এখন এই আর্টিকেলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। বর্তমানে প্রায় বেশিরভাগ মানুষেরই এলার্জি সমস্যা হয়ে থাকে। যার এলার্জি আছে সে জানে এটা কতটা অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে।
অনেকে এলার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে থাকেন। এতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে এলার্জির ওষুধ খেলে অতিরিক্ত ঘুম হয়ে থাকে এবং ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে। এলার্জি থেকে আরো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন শ্বাসকষ্ট,হাঁচি কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।
তাই এলার্জি সমস্যার সমাধানের নিম পাতার ব্যবহার হতে পারে কার্যকরী সমাধান। এলার্জিতে নিমপাতা ব্যবহার করলে আপনি চিরতরে অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাছাড়া নিমপাতা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হীন সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপাদান যা এলার্জি নিরাময়ে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন। যেভাবে নিম পাতা এলার্জিতে ব্যবহার করতে পারেন তাহলোঃ
- এক ১ থেকে দেড় কেজি নিমপাতা নিয়ে খুব ভালো করে ধুয়ে তা রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর তা গুঁড়ো করে কৌটায় সংরক্ষণ করতে হবে। তারপর হাফ চামচ নিম পাতার গুঁড়ো ও এক চামচ ইসবগুল ভিজিয়ে রেখে তা সকালে ও বিকালে খেতে হবে। যদি অতিরিক্ত তিতার কারণে খেতে না পারেন তাহলে এর সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে নিয়মিত একমাস খেতে পারলে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
- কিছু পরিমাণ নিমপাতা পানিতে মিশিয়ে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে এলার্জি অনেকটা উপশম হয়।
- নিমপাতা বেটে তা এলার্জিতে ব্যবহার করলে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
-
হলুদ ও নিম পাতা বেটে শরীরে লাগালে এলার্জি কমে যাবে।
ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার
- নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে মাথা ও চুল ধুয়ে ফেলুন এতে নিম পাতার অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে।
- চুলের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে ও চুলের গোড়া মজবুত করতে নিম পাতার তেল চুলের গোড়ায় মেসেজ করুন। এতে চুল পড়া বন্ধ হবে।
- চুলের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনতে নিমপাতা বাটার সাথে টক দই মিশিয়ে তা চুলে লাগান এবং কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং চুল হবে অনেক বেশি সুন্দর।
-
নিম পাতা অথবা নিমের ফল বেটে তা মাথায় লাগালে মাথার উকুন দূর হয়ে যাবে।
রোগ প্রতিরোধে নিম পাতার ব্যবহার
- সকালের নিম পাতার রস খেলে শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণ দূর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানি পান করুন এতে শরীরে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর হবে।
- নিম পাতাপুড়িয়ে সে ধোঁয়া ছড়িয়ে দিলে ম্যালেরিয়া বাহিত মশা ধ্বংস হয় যা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অনেক বেশি কার্যকরী।
হজমে ও পেটের সমস্যায় নিম পাতার ব্যবহার
নিম পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
নিমপাতা ওজন কমাতে সাহায্য করে
সংক্রমণ ও ক্ষত নিরাময়ে নিমপাতা
নিম পাতার আরও ব্যবহার ও উপকারিতা
- নিম দাঁতের জন্য বিশেষ কার্যকরী। মুখে দুর্গন্ধ দূর করার ক্ষেত্রে নিমপাতার বেশ উপকার রয়েছে। নিম গাছের ডালের মেসওয়াক দিয়ে মেসওয়াক করলে মুখের দুর্গন্ধ চলে যায় ও দাঁত মজবুত ও দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।
- ক্ষুধা মন্দা ও অজীর্ণতা হলে নিমপাতা বেশ উপকার দেয়। পেটের বিভিন্ন সমস্যা যদি আপনার অজির্নতা হয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত নিমপাতা সেবন করলে অজির্নতা দূর হবে।
- নিমপাতা ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকরী। ঠান্ডা জনিত কারণে বুকে ব্যথা, কফ দূর করতে নিমের পাতার রস পানির সঙ্গে মিশিয়ে গরম করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- নিমের পাতা নিমের গাছের ছাল ফল বাতের ব্যথা নিরাময়ে অনেক উপকারী। বাতের ব্যথার কারণে নেমে তেল মালিশ করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- চোখ চুলকালে কয়েকটি নিম পাতা পানির সঙ্গে মিশিয়ে সেদ্ধ করে। তারপর সে পানি ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা হলে সে পানি দিয়ে চোখে ঝাপটা দিতে হবে। তাহলে চোখের চুলকানি কমে যাবে।
- জন্ডিস রোগের ক্ষেত্রেও নিম পাতা বিশেষ কার্যকরী। সকালে খালি পেটে নিম পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে জন্ডিস থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।
- নিম পাতার রস নিয়মিত খেলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং রক্তে শর্করের মাত্রা কমে যায়।
- নিম পাতার রস কৃমিনাশক ও উকুন নাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
-
এলার্জির পাশাপাশি চুলকানি, দাউদ, একজিমা ক্ষেত্রেও নিমপাতা বেশ
কার্যকরী।
নিম পাতার অপকারিতা
- অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে এলার্জি সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
- অনেক সময় নিম পাতা খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব হতে পারে।
- গর্ভবতী মায়েদের নিমপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে
- শিশুদের নিম পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে সন্তান জন্মদান ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- নিমপাতা ব্যবহারের ফলে অনেক সময় ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url